Pages

Sunday, January 21, 2018

সুগন্ধা শক্তিপীঠ বাংলাদেশের বরিশালে অবস্থিত


সুগন্ধা শক্তিপীঠ

সুগন্ধায়ঞ্চ নাসিকা দেবস্ত্রম্ব্যকনামা চ সুনন্দা তত্র দেবতা ।
ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে লেখা আছে –
সুগন্ধায় নাসিকা পড়িল চক্রহতা ।
ত্র্যম্বক ভৈরব তাহে সুনন্দা দেবতা ।।
এখানে দেবী জগদম্বা সতী দেবীর নাসিকা পতিত হয়েছিল । ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে এই শক্তিপীঠের নাম পাওয়া যায় । শিবচরিতে ও পীঠনির্ণয়তন্ত্রে এই সতী পীঠের কথা আছে । তবে কালিকাপুরান, দেবী ভাগবত, কুব্জিকা তন্ত্রে অবশ্য এই পীঠ সম্বন্ধে কিছুই বলা হয় নি । পণ্ডিত দের মতে এই শক্তিপীঠ বাংলাদেশের বরিশালে অবস্থিত । বরিশাল জেলা শহর থেকে ২৭ কিমি উত্তরে শিকারপুর গ্রামে এই পীঠ অবস্থিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশে এক সময় পোনাবালিয়া ও সামরাইলের পাশ দিয়ে পবিত্র সুগন্ধা নদী প্রবাহিত হতো । কিন্তু কালের করাল গ্রাসে আজ সে নদী নাব্যতা, স্রোত হারিয়ে ক্ষীণ স্রোতা হয়েছে- যার নাম সোন্ধ । তবে মা কিন্তু এখনও আছেন। সুগন্ধা নদীর পূর্ব পাড়ে দেবীপীঠ পশ্চিম পাড়ে দেবীর ভৈরব ত্র্যম্বকেশ্বর বিরাজমান । একসময় এখানে গভীর জঙ্গল ছিল। দিনেরবেলাতেও লোকজন যেতে ভয় পেতেন । সেই সময় শিকারপুরের খুব ধনী ভূস্বামী শ্রীরাম রায় একদিন স্বপ্নে মহাদেবের আদেশ পেলেন । মহাদেব স্বপ্নে তাঁকে জানালেন – “ তোমার রাজত্বের সামরাইলে জঙ্গলে এক ঢিপির মধ্যে আমি অবস্থান করছি। তুমি সেখান হতে আমাকে উদ্ধার করো। তোমার মঙ্গল হবে।”

স্বপ্ন দেখা মাত্রই পরদিন রাম রায় প্রচুর লোকজন নিয়ে সেই জঙ্গলে তল্লাশি করতে গেলেন । সে সময় জঙ্গলে কিছু রাখাল বালক গোরু চড়াচ্ছিল্ল। অত লোকজন পাইক পেয়াদা দেখে রাখাল বালক গন ভয় পেয়ে পালাতে উদ্যত হলে রাম রায় অভয় দিয়ে বলল- “ওহে রাখাল বালক গন। আমাকে দেখে ভীত হয়ে পালানোর দরকার নেই, আমি এখানে জঙ্গলের মধ্যে কেবল একটি অলৌকিক ঢিপির খোঁজ করতে এসেছি।” রাখাল বালক গন এইরকম একটা অলৌকিক ঢিপির সন্ধান জানতো । তারা একটা ঘটনা বলল। ঘটনা টা এই । রাখাল দের গোরু গুলো আগের মতো আর দুগ্ধ প্রদান করছিল না। গোরুর মালিক ভাবল রাখাল রাই নিশ্চয়ই দুধ চুরি করে গোরু চড়ানোর সময় । একদিন গোরুর মালিক ভাবল হাতে নাতে চোর গুলোকে ধরবে । তারপর রাজার কাছে নালিশ জানাবে ।
এই ভেবে একদিন মালিক রাখাল দের পিছু নিলো চুপিসারে । জঙ্গলে গোরু গুলো যখন তৃন খাচ্ছিল্ল- মালিক লুকিয়ে দেখছিল। হঠাত মালিক দেখলো গোরু গুলো একে একে জঙ্গলে ঢুকে একটা উচু ঢিপিতে নিজেরাই বাঁট থেকে দুধ দিচ্ছে। মালিক ভাবল গোরু গুলো এমন করছে কেন? ঐ ঢিপিতে কি আছে ? ভেবে মালিক নিজে জঙ্গলের শুকনো কাঠ খড় জোগার করে ঐ ঢিপিতে আগুন ধরিয়ে দিলো । লেলিহান আগুনের শিখা যখন লকলক করে উঠছিল- মালিক দেখলো একটি কৃষ্ণ বর্ণা বালিকা সেই ঢিপি থেকে দৌড়ে পাশে জলাশয়ে প্রবেশ করলো । রাখাল দের কাছে এই শুনে ধনী রাম রায় সেই ঢিপির কাছে পৌছে খনন করার আদেশ দিলো। খনন করতেই লিঙ্গ মূর্তি বের হল । রাম রায় ভাবল এই লিঙ্গ তিনি গৃহে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে নিত্যসেবা করবেন । কিন্তু আশ্চর্য কত শত লোক মিলেও সেই লিঙ্গ তুলতে পারলো না । সেইদিন রাতে ভগবান ভোলানাথ আবার রাজাকে স্বপ্নে বললেন- ‘আমাকে ঐখানেই প্রতিষ্ঠা করো । মনে রাখবে আমার বিহারের স্থানে কোনো আচ্ছাদন থাকবে না।’ বিত্তশালী রাম রায় সেই ভাবেই বাবাকে স্থাপন করে নিত্য পূজার ব্যবস্থা করলেন ।

অপরদিকে আর একটি ঘটনা । শিকারপুর গ্রামে পঞ্চানন চক্রবর্তী নামে একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ বাস করতো । সে ছিল সৎ, ধার্মিক, মানব প্রেমিক। একদা স্বপ্নে মা কালী তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন- “সুগন্ধার গর্ভে আমি শিলারূপে বিরাজিতা আছি। তুমি আমাকে সেখান থেকে তুলে এনে প্রতিষ্ঠা ও পূজোর ব্যবস্থা করো।” চক্রবর্তী মশাই সেই স্বপ্নাদেশে দেখানো জায়গা থেকে মায়ের পাষাণ মূর্তি তুলে প্রতিষ্ঠা ও নিত্য পূজা করতে লাগলেন । গ্রামের লোকেরা এসে যে যা পারে- তাই দিয়ে মায়ের সেবা করতে লাগলো । দুঃখের বিষয় সেই মূর্তি চুরি হয়ে গেছে । বর্তমানে সেখানে দেবী উগ্রতারার মূর্তি বিরাজিতা। তাঁকেই দেবী সুগন্ধা রূপে পূজা করা হয় । দেবী খড়্গ, খেটক, নীলপদ্ম, নর মুণ্ডের কঙ্কাল ধারন করে আছেন । মাথার ওপর কার্ত্তিক, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব , গণেশ বিরাজমান । এই মূর্তি বৌদ্ধ তন্ত্রের উগ্রতারার । এথেকে প্রমানিত ভারতবর্ষের বঙ্গপ্রদেশে প্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্র সাধনার ব্যপক প্রচার ছিল । বৌদ্ধ তন্ত্রে তারা সাধনার বিশেষ প্রনালী দেখা যায়- সেই মতেই তারা মায়ের উপাসনা হয়। বাংলায় অনেক প্রাচীন কালী মন্দির, দেবী মন্দির দেখা যায় । বাংলায় শক্তি সাধনা হতো । যাই হোক সুগন্ধা শক্তিপীঠের দেবীর প্রাচীন মন্দির এখন আর নেই। এখন যেটা আছে সেটা নবনির্মিত । তবে সতী মায়ের প্রস্তরীভূত দেবী অংশ এখানে কোথায়- তা কেউ জানেন না। একমাত্র মা জানেন । অভয়দায়িনী, শিবশক্তি, আদিভূতা সনাতনী সুগন্ধা মায়ের চরণে অনেক প্রনাম ।

 
Design by দেবীমা | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes