Pages

Wednesday, October 31, 2018

শ্যামা কালী মায়ের পুজা ও দীপাবলী উৎসব



হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসবটি কালী পূজা নামেও পরিচিত। একইসঙ্গে উদ্যাপিত হয় দীপাবলী উৎসব। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের মাধ্যমে ভক্তের জীবনে কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী শ্যামা বা কালীর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে শ্যামা দেবী শান্তি, সংহতি ও সংগ্রামের প্রতীক। হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যের মধ্য দিয়ে শ্যামা পূজা উদযাপন করে। মন্ডপে মন্ডপে শ্যামা দেবীর পূজা আয়োজিত হয়।, শ্যামা মায়ের পূজা, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানা আয়োজন হয় এ পূজায়। একইসঙ্গে সন্ধ্যায় মন্দির, মন্ডপ ও ঘরে-ঘরে দীপাবলী উদযাপনের জন্য প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয়।
অমাবস্যা রজনীর সমস্ত অন্ধকার দূর করে পৃথিবীকে আলোকিত করার অভিপ্রায়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের প্রতিটি ঘরে ঘরে উত্তোলন হয় প্রদীপ। পৃথিবীর সকল অন্ধকারের অমানিশা দূর করতেই এই আয়োজন। অশুভ শক্তির হাত থেকে প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে রক্ষা করতেই এই আলোকিত করা। অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করার প্রয়াস মানুষ সেই আদিকাল থেকেই করে আসছে। এর মাধ্যমে অর্থাৎ জ্ঞানের অবস্থান এবং স্বর্গীয় পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কালী মাতার কাছে স্বামী-স্ত্রী সন্তান স্বজনের কল্যাণ এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করে থাকে। দীপাবলীকে দেওয়ালি ছাড়াও দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। মহালয়ায় শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্তে আগমন করেন বলে, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে এদিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোতবাতি জ্বালায়, কেউ বা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায়।রামায়ন অনুসারে দীপাবলী দিনে ত্রেতা যুগে শ্রী রাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রী রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্যজুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশীতে শব্দবাজি করে। দীপাবলী মূলত পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। দীপাবলীর আগের দিনের চতুর্দশীকে বলা হয় ‘নরকা চতুর্দশী, এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর স্ত্রী সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। চতুর্দশী পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলী উৎসবের দ্বিতীয় দিন, কিন্তু এই দিনই মূল হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিন রাতে শক্তি দেবী কালীর পূজা করা হয়। বিষ্ণুপুরান মতে, বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে পাতালে পাঠান, দীপাবলী দিনে পৃথিবীতে এসে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুদ অযুদ প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। দীপাবলীর তৃতীয় দিন-কাল কার্তিকা শুদ্ধ। এই দিন অসুর বলি নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করে। চতুর্থ দিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া। একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়। এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্ত্রণ করে, কপালে ফোটা দেয়, হাতে রাখী বেঁধে দেয়।
দীপাবলীর রাতে অনুষ্ঠিত হয় শ্যামা কালী পূজা। হিন্দু পুরাণ মতে কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালী পূজার মাহাত্ম্য। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।


Saturday, October 27, 2018

বগলামুখী বা বগলা হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা


বগলামুখী বা বগলা  হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা

মন্ত্র ওঁ হ্ল্রীঁ বগলামুখী সর্বদুষ্টানাং 
বচং মুখং পাদং স্তম্ভয় জিহ্বাং কীলয়
বুধীং বিনাশয় হ্ল্রীঁ ওঁ স্বাহা
অস্ত্র মুগুর
বাহন মৃতদেহ বা প্রেত
বগলামুখী বা বগলা (দেবনাগরী: बगलामुखी) হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। তাঁর অস্ত্র মুগুর। উত্তর ভারতে তিনি পীতাম্বরী নামেও পরিচিত।

মূর্তিতত্ত্ব
"বগলামুখী" শব্দটি "বগলা" (অর্থাৎ, ধরা) এবং "মুখ" শব্দদুটি থেকে উৎপন্ন। এই শব্দটির অর্থ যিনি যাঁর মুখ কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে সমর্থ। অন্য একটি অর্থে, যিনি মুখ তুলে ধরেছেন।
বগলামুখীর গায়ের রং সোনালি এবং তাঁর কাপড়ের রং হলুদ। তিনি হলুদ পদ্মের ভরা অমৃতের সমুদ্রের মাঝে একটি হলুদ সিংহাসনে বসে থাকেন। তাঁর মাথায় অর্ধচন্দ্র শোভা পায়। দুটি পৃথক বর্ণনার একটিতে তাঁকে দ্বিভূজা ও অপরটিতে তাঁকে চতুর্ভূজা বলা হয়েছে।
বগলামুখীর দ্বিভূজা মূর্তি পূজার প্রচলনই বেশি। এই মূর্তিটিকে সৌম্য মূর্তি ধরা হয়। এই মূর্তিতে তাঁর ডান হাতে থাকে গদা। এই গদা দিয়ে তিনি শত্রুকে প্রহার করেন। অন্যদিকে বাঁহাতে শত্রুর জিভটি টেনে ধরে থাকেন। এই মূর্তিটিকে অনেক সময় "সম্ভন" (শত্রুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে তাকে শক্তিহীন করা) প্রদর্শন হিসেবে ধরা হয়। এই বর লাভের জন্য ভক্তেরা তাঁর পূজা করে থাকে। অন্যান্য মহাবিদ্যাদেরও এই শক্তি আছে বলে ধরা হয়।
বগলামুখীকে" "পীতাম্বরা দেবী" বা "ব্রহ্মাস্ত্র-রূপিণী"ও বলা হয়। তিনি একটি গুণকে বিপরীত গুণে পরিবর্তন করে পারেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। যেমন, তিনি বাক্যকে নিঃস্তব্ধতায়, জ্ঞানকে অজ্ঞানে, শক্তিকে শক্তিহীনতায়, পরাজয়কে জয়ে পরিবর্তন করেন।

বগলামুখী দেবী সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে : একসময় পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঝড় হয়। এই ঝড়ে যখন সকল সৃষ্টি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তখন সকল দেবতা সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে একত্রিত হন। সেই সময় দেবী বগলামুখী হরিদ্রা সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে দেবতাদের স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে সেই ঝড় থামিয়ে দেন। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দাতিয়া অঞ্চলের পীতাম্বরা পীঠমে হরিদ্রা সরোবরের অনুরূপ একটি হ্রদ রয়েছে।

ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রবিদ্যার কেন্দ্রস্থল। এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দির আছে। এই মন্দিরের কয়েক মাইল দূরেই বগলামুখী মন্দিরের অবস্থান। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বাণখণ্ডীতে, মধ্যভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আগর মালব জেলার নলখেদা ও দাতিয়ার পীতাম্বরা পীঠে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলার পাপানকুলাম জেলার কল্লাইদাইকুরিচিতে এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাতেও বগলামুখীর মন্দির আছে

Wednesday, October 24, 2018

লক্ষ্মীদেবী পূজার আগের কিছু সাধারন নিয়ম

সাধারণত কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে সারারাত জেগে থাকার বিধি আছে। এই পূজার সঙ্গে কৃষকদের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই শোনা যায় সারারাত জেগে তারা ওইদিন শস্য পাহাড়া দেয়। সঙ্গে মার কাছে আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়া হয়। আবার অনেকে মনে করেন, লক্ষ্মী দেবী চঞ্চলা তাই সারারাত জেগে তাকে পাহাড়া দেওয়া হয়, যাতে তিনি পালিয়ে না যান। এই কথা মা ঠাকুমাদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। লক্ষ্মীদেবী ধনসম্পদ তাকেই দেন যে তার পুরো মর্যাদা দেয়। যে সেই ধনসম্পদ সমাজের কল্যাণে কাজে লাগায়। তাই লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা অত্যন্ত শুদ্ধ মনে করতে হয়। মা লক্ষ্মী অল্পেই খুশী হন। তাই এই পূজায় খুব একটা বাহুল্য নেই। যে যার সাধ্যমত পূজা করে। তবে পূজার আগে পূজার স্থান একদম পরিষ্কার করে নিন। তারপর সুন্দর করে আলপনা দিয়ে দিন। প্রতি ঘরের দরজায়, পূজার স্থানে লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন। সেইদিন আলপনা মুছবেন না। তারপর পূজার জায়গা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে, ধূপ, ধুনো, প্রদীপ জালিয়ে দিতে হয়।

লক্ষ্মীদেবী
পূজা শুরুর নিয়ম:-
সব আয়োজন পূর্ণ এবার পূজা শুরু। শুরুর আগে গঙ্গা জল ছিটিয়ে দিন নিজের ও সকলের মাথায় ও পূজার স্থানে। তারপর নারায়ণকে মনে মনে স্মরণ করে পূজা শুরু করুন। পূজার স্থানে একটি তামার পাত্রে জল রাখুন। এই জল সূর্য দেবতাকে অর্পণ করার জন্য। তিনি সকল শক্তির উৎস। তাকে ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার। তাই তাকে জল দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তামার পাত্রে জল ঢালতে ঢালতেই সূর্যদেবতাকে স্মরণ করুন।
এরপর ঘট স্থাপনের পালা। মাটির একটি গোল ডেলা মত করে নিন, সমান করে নিন। তার ওপর ঘট বসান। এবং ঘটের সামনে একটু ধান ছড়িয়ে দিন। ঘটে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকুন সিঁদুর দিয়ে। ঘটের ওপর আমের পাতা রাখুন। পাতার সংখ্যা যেন বিজোড় হয়। আর পাতার ওপর তেল সিঁদুরের ফোঁটা দেবেন। ঘটে গঙ্গাজল দিয়ে তার ওপর আমের পাতা রাখুন। পাতার ওপর একটা হরিতকী, ফুল, দুব্বো, সব দিয়ে ঘট সাজান।ঘট স্থাপনের পর মাকে প্রণাম করার পালা। ধ্যান মন্ত্রে মা কে প্রণাম করুন। লক্ষ্মী পাঁচালীর বইয়ে এই মন্ত্র পাবেন। এই বই যেকোনো দশকর্মার দোকানে পেয়ে যাবেন। তবে এই মন্ত্র উচ্চারন একটু শক্ত। তাই যদি সঠিক উচ্চারন করতে না পারেন তাহলে মাকে মনে মনে স্মরণ করে প্রণাম জানাবেন।
মাকে প্রণাম করে এবার আহবান জানান। আহবান মন্ত্রও বইয়ে দেওয়া থাকে। না জানলে মাকে মনে মনে আহবান জানান। হাত নমস্কার করে চোখ বন্ধ করে, বলুন এসো মা আমার গৃহে প্রবেশ কর। আমার গৃহে অধিষ্ঠান কর। আমার এই সামান্য আয়োজন, নৈবিদ্য গ্রহণ কর মা। এইভাবে মাকে আহবান জানাবেন।
মা আপনার ঘরে প্রবেশ করছেন তাই মায়ের পা ধুয়ে দিন। মায়ের আঁকা পায়ে জলের ছিটা দিন। তারপর ঘটে আতপচাল, দুব্বো, ফুল ও চন্দন দিন। এরপর একে একে দেবীকে সব অর্পণ করুন। ফল, মিষ্টি যা কিছু আয়োজন করেছেন। তারপর ধূপ ধুনো দিন। অর্পণ করার পর এবার পুষ্পাঞ্জলি। হাতে ফুল নিয়ে পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র তিনবার উচ্চারন করুন। তারপর দেবীর বাহনকে ফুল দিন। এবং নারায়নকে স্মরণ করে ঘটে ফুল দিন। ও দেবতা ইন্দ্র ও কুবেরকে স্মরণ করে ঘটে ফুল দিন। তারপর দেবীকে প্রণাম করুন। এরপর সবশেষে লক্ষ্মীদেবীর পাঁচালী পড়ে পূজা শেষ করুন।তবে কয়েকটি কথা মাথায় রাখবেন। লক্ষ্মীদেবীর পূজায় কাঁসর ঘণ্টা এসব বাজাবেন না। এগুলিতে দেবী অসন্তুষ্ট হন। শুধু শাঁখ বাজান আর দেবীর ঘটে তুলসীপাতাও দেবেন না। আর দেবেন না লোহার বাসন। ব্যাস এই কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে শুদ্ধ মনে শুরু করে দিন পূজা। হোকনা আয়োজন সামান্য শুধু মন শুদ্ধ থাকলেই দেবী আসবেন ঘরে।

Sunday, October 21, 2018

শ্রীশ্রী কোজাগরীলক্ষ্মী পূজা


শ্রীশ্রী কোজাগরীলক্ষ্মী পূজা

আগামী ৬ কার্ত্তিক, বুধবার শ্রীশ্রী কোজাগরীলক্ষ্মী পূজা.মা লক্ষ্মীর ১০৮ নাম
.................................
১) প্রকৃতি ,২) বিক্রুতি , ৩) বিদ্যা , ৪) সর্বভূতহিতপ্রদা, ৫) শ্রদ্ধা , ৬) বিভূতি, ৭) সুরভি, ৮) পরমাত্মিকা , ৯) জয়প্রদা , ১০) পদ্মালয়া , ১১) পদ্মা , ১২) শুচী, ১৩) স্বাহা, ১৪) স্বাধা, ১৫) সুধা , ১৬) ধন্যা , ১৭) হিরন্ময়ী, ১৮) লক্ষ্মী , ১৯) নিত্যাপুষ্টা, ২০) বিভা, ২১) অদিত্যা, ২২) দিত্যা, ২৩) দীপা, ২৪) বসুধা, ২৫) ক্ষীরোদা, ২৬) কমলাসম্ভবা, ২৭) কান্তা, ২৮) কামাক্ষী, ২৯) ক্ষীরোদসম্ভবা , ৩০) অনুগ্রহাপ্রদা, ৩১) ঐশ্বর্য্যা , ৩২) অনঘা, ৩৩) হরিবল্লভী, ৩৪) অশোকা , ৩৫) অমৃতা, ৩৬) দীপ্তা, ৩৭) লোকাশোকবিনাশিনী, ৩৮) ধর্মনিলয়া, ৩৯) করুণা, ৪০) লোকমাতা, ৪১) পদ্মপ্রিয়া, ৪২) পদ্মহস্তা, ৪৩) পদ্মাক্ষী , ৪৪) পদ্মসুন্দরী, ৪৫) পদ্মভবা, ৪৬) পদ্মমুখী, ৪৭) পদ্মনাভপ্রিয়া, ৪৮) রমা, ৪৯) পদ্মমালাধরা , ৫০) দেবী,

৫১) পদ্মিনী, ৫২) পদ্মগন্ধিণী , ৫৩) পুণ্যগন্ধা, ৫৪) সুপ্রসন্না, ৫৫) শশীমুখী , ৫৬) প্রভা, ৫৭) চন্দ্রবদনা, ৫৮) চন্দ্রা , ৫৯) চন্দ্রাসহোদরী , ৬০) চতুর্ভুজা , ৬১) চন্দ্ররূপা , ৬২) ইন্দিরা, ৬৩) ইন্দুশীতলা, ৬৪) আহ্লাদিণী, ৬৫) নারায়নী , ৬৬) বৈকুন্ঠেশ্বরি ৬৭) হরিদ্রা ৬৮) সত্যা , ৬৯) বিমলা, ৭০) বিশ্বজননী, ৭১) তুষ্টি, ৭২) দারিদ্রনাশিণী, ৭৩) ধনদা , ৭৪) শান্তা, ৭৫) শুক্লামাল্যাম্বরা , ৭৬) শ্রী, ৭৭) ভাস্করী , ৭৮) বিল্বনিলয়া , ৭৯) হরিপ্রিয়া , ৮০) যশস্বীনি , ৮১) বসুন্ধরা , ৮২) উদারঙ্গা, ৮৩) হরিণী , ৮৪) মালিনী, ৮৫) গজগামিনী , ৮৬) সিদ্ধি , ৮৭) স্ত্রৈন্যাসৌম্যা , ৮৮) শুভপ্রদা, ৮৯) বিষ্ণুপ্রিয়া , ৯০) বরদা , ৯১) বসুপ্রদা, ৯২) শুভা , ৯৩)চঞ্চলা , ৯৪) সমুদ্রতনয়া , ৯৫) জয়া , ৯৬) মঙ্গলাদেবী, ৯৭) বিষ্ণুবক্ষাস্থলাসিক্তা , ৯৮) বিষ্ণুপত্নী, ৯৯) প্রসন্নাক্ষী , ১০০) নারায়নসমাশ্রিতা ,
১০১) দারিদ্রধ্বংসিণী, ১০২) কমলা, ১০৩) সর্বপ্রদায়িনী, ১০৪) পেঁচকবাহিণী, ১০৫) মহালক্ষ্মী, ১০৬) ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবাত্মিকা , ১০৭) ত্রিকালজ্ঞানসম্পূর্ণা, ১০৮) ভুবনমোহিনী।
প্রাতঃকালে মা লক্ষ্মীর নিম্নলিখিত নাম উচ্চারনে দারিদ্রতা নিবারণ হয়ঃ-
লক্ষ্মীঃ শ্রীঃ কমলা বিদ্যা মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সতী ।
পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী ।।
ভূতানামীশ্বরী নিত্যা মতা সত্যাগতা শুভা ।।
বিষ্ণুপত্নী মহাদেবী ক্ষীরোদতনয়া ক্ষমা ।।
অনন্তলোকলাভা চ ভূলীলা চ সুখপ্রদা ।
রুক্মিনী চ তথা সীতা মা বৈ বেদবতী শুভা ।
এতানি পুণ্যনামানি প্রাতরুত্থায় যঃ পঠেৎ ।
মহাশ্রিয়মবাপ্নোতি ধনধান্যমকল্মষম্ ।।
বঙ্গানুবাদ- শ্রী, কমলা বিদ্যা, মাতা, বিষ্ণুপ্রিয়া , সতী, পদ্মালয়া, পদ্মহস্তা, পদ্মাক্ষী , পদ্মসুন্দরী, ভূতগণের ঈশ্বরী, নিত্যা, সত্যাগতা , শুভা, বিষ্ণুপত্নী, ক্ষীরোদতনয়া, ক্ষমাস্বরূপা, অনন্তলোকলাভা , ভূলীলা, সুখপ্রদা, রুক্মিনী, সীতা, বেদবতী- দেবী লক্ষ্মীর এসকল নাম। প্রাতে উত্থান কালে যিনি দেবীর এই পুন্য নামাবলী পাঠ করেন, তিনি বিপুল ঐশ্বর্য ও নিস্পাপ ধনধান্য প্রাপ্ত হন ।

Saturday, October 20, 2018

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো


কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো
 মা লক্ষ্মীর চারটি হাত। ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ— হিন্দুশাস্ত্রে এই চার হাতের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাহয়েছে এভাবেই। যাঁরা মনে করেন মা লক্ষ্মী শুধুমাত্র ধনের দেবী, তাঁরা সম্ভবত দেবীর এই ব্যাখ্যা সম্পর্কেঅবহিত নন।
সমুদ্রমন্থন থেকে উদ্ভব মা লক্ষ্মীর। কিন্তু সবার আগে জানা প্রয়োজন তিনি কে? কীভাবে আবির্ভূতহলেন তিনি। এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। কখনও বলা হয় তিনি ছিলেন ঋষি ভৃগুর সন্তান এবং সমুদ্রমন্থনে তাঁর পুনর্জন্ম হয়। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, তিনি সমুদ্রদেব বরুণের কন্যা।
মা লক্ষ্মীরও আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী। একটি পৌরাণিক গল্পে বলা হয়েছে, ব্রহ্মার সাত সন্তান, সপ্তঋষির মধ্যে ৬জনই দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে দৈবজ্ঞান লাভ করেন। কিন্তু প্রশ্ন তোলেন মহর্ষি ভৃগু। মানবশরীরের ক্ষুধা নিবারণ কীভাবে ঘটে, সেই খোঁজে তিনি বেরিয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত উত্তরটি পান সমু্দ্রদেববরুণের কাছে।
মহর্ষি ভৃগু তার পরেই উপলব্ধি করেন যে মগজের বা মননের পুষ্টিলাভ যেমন হয় দেবী সরস্বতীর আরাধনায় তেমনই নশ্বর শরীরের পুষ্টির জন্য মা লক্ষ্মীর আবাহন ও পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মা লক্ষ্মীকে শুধুমাত্র ধনদেবী হিসেবে দেখলে তাঁর মহিমার সম্পূর্ণটা দেখা হয় না।
তাঁর আশীর্বাদ মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, গৃহস্থের সার্বিক কল্যাণের জন্য। আর এই দুয়ের জন্যই প্রয়োজন অর্থের। কিন্তু সেই অর্থ পাওয়ার পরে মানুষ তার প্রয়োগ কীভাবে করছে, সেদিকে তাঁর কড়া নজর। অপচয় বা অন্যায় প্রয়োগ তিনি সইতে পারেন না, তাই তিনি চঞ্চলা।

যে মানুষ ধর্মের পথে থাকে, সৎকর্মের মাধ্যমে ধন উপার্জনে করতে যে তৎপর, তাঁকেই কৃপা করেন মা লক্ষ্মী। মোট ১৬ প্রকার সম্পদ প্রদান করেন তিনি— খ্যাতি, জ্ঞান, সাহস ও শক্তি, জয়, সুসন্তান, বীরত্ব, স্বর্ণ, অন্যান্য রত্নরাজি, শস্য, সুখ, বুদ্ধি, সৌন্দর্য, উচ্চাশা, উচ্চভাবনা, নৈতিকতা, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন।
আবার মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের পরেও যে ধর্ম ও সৎকর্মের পথ থেকে বিচ্যুত হয় না, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উপার্জিত অর্থ মানুষের উপকারে ব্যয় করে, তারই প্রকৃত মোক্ষলাভ ঘটে।
অর্থাৎ একটি সুস্থ, সুন্দর, সৎ জীবনদর্শনের কথা উঠে আসে মা লক্ষ্মীর মহিমা বর্ণঁনায়। তাই দেবী অপরিচ্ছন্ন জায়গায় কখনও থাকেননা, নিয়মানুবর্তিতা, সুব্যবহার এবং পরিমিত জীবনযাপন পছন্দ করেন। বাংলায় লক্ষ্মীপুজোর সংস্কৃতি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে একটু অন্যরকম।
যেমন ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে শুক্রবার মহালক্ষ্মীর উপবাস রাখা হয় ও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। ওদিকে বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মীবার। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও উত্তর ও পশ্চিম-ভারতে মা লক্ষ্মীর আবাহন মূলত হয় ধনতেরাস-দিওয়ালি তিথিকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু বছরে মাত্র একটি বা দু’টি দিন নয়, শাস্ত্রজ্ঞরা বলেন যে ধারাবাহিকভাবে, যদি সারা বছরই কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করা যায় এবং ভক্তিভরে কিছু নির্দিষ্ট মন্ত্রোচ্চারণ করা যায়, তবে তাঁর কৃপালাভের পথ সুগম হয়।


ভক্তরা নানাভাবে দেবদেবীর আরাধনা করেন। হিন্দুধর্ম ও হিন্দু আচারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র যা অঞ্চলবিশেষে যেমন আলাদা, তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত মেটামরফোজড হয়ে চলেছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলেন, যত মত তত পথ, তেমনই আচার-অনুষ্ঠানের কোনও শেষ নেই এবং সেই সব পথই ধাবিত হয় ঈশ্বরের দিকে। মনে যদি ভক্তি থাকে, তবে যে পথেই আরাধনা করা হোক না কেন, ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনা অবশ্যই পৌঁছয়। নীচে উল্লিখিত আচারগুলি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচলিত।
১. ঠাকুরঘরে বা ঠাকুরের সিংহাসনে কড়ি এবং শঙ্খ রাখা খুবই শুভ গৃহের কল্যাণের জন্য।
২. দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয় বাসস্থানে।
৩. প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে দু’টি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে তা মঙ্গল। এর সঙ্গে পদ্ম, নারকেল ও ক্ষীরের নৈবেদ্য দিলে প্রসন্ন হন দেবী।
 ৪. একটি বাঁশের বাঁশিকে সিল্কের কাপড়ে মুড়ে ঠাকুরের সিংহাসনে রাখলে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন কারণ বাঁশিহল বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। তাই মা লক্ষ্মীরও অতি প্রিয়।
 ৫. শুধুমাত্র পুজোর দিনে নয়, প্রতিদিনই যদি দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা ভাল। প্রতিদিন না পারলে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এবং মা লক্ষ্মীর পুজোর তিথি থাকলে তো অবশ্যই।
৬. যিনি প্রতি শুক্রবার পরমান্ন বা মিষ্ট অন্ন দিয়ে গোসেবা করেন তাঁর প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী।

৭. বলা হয় সমস্ত দেবতা বাস করেন তুলসি বৃক্ষে আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী দেবী তুলসি হলেন মা লক্ষ্মীরই এক রূপ। তাই বাড়িতে তুলসি বৃক্ষ থাকলে এবং সেখানে প্রতিদিন সেখানে প্রদীপ জ্বাললে তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী।
 ৮. প্রতি শুক্রবার পদ্মমূল থেকে তৈরি নয়টি সলতে দিয়ে একটি মাটির প্রদীপ মা লক্ষ্মীর পট বা প্রতিমার সামনে জ্বাললে তা গৃহে প্রাচুর্যের সমাহার ঘটায়।
 ৯. ধারাবাহিকভাবে ১২ দিন ধরে সম্পূর্ণ ভক্তিভরে লক্ষ্মী দ্বাদশ স্তোত্র ১২ বার উচ্চারণ করলে ঋণমুক্তি ঘটে।
 ১০. প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে লক্ষ্মী গায়ত্রী মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী। এই মন্ত্র জপ করার সময় পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করলে ভাল।
১১. এছাড়া টানা ৩০ দিন ধরে মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা পটের সামনে নিষ্ঠাভরে শ্রী সুক্ত পাঠ করলে বিশেষ প্রসন্ন হন দেবী। শ্রী সুক্ত হল ১৫টি ভার্সের একটি সম্মেলন।


 লক্ষ্মীপূজায় নিষিদ্ধ বিষয় : লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান।লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যেকরে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়।

কিছু বিষয় : লক্ষ্মীপূজা প্রতিমা, সরা বা লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে হয়ে থাকে। পূর্ববঙ্গীয়রা সাধারণত সরা বা প্রতিমায় লক্ষ্মীপূজা করেন, পশ্চিমবঙ্গীরা লক্ষ্মীর ধানপাত্রে বা ঘটে পূজা করেন। কারো কারো বিশেষ পারিবারিক লক্ষ্মীপ্রতীক রয়েছে। যাঁর যা আছে, বা যাঁদের যা নিয়ম তাঁরা তাতেই লক্ষ্মীপূজা করবেন। পূজার পূর্বে পূজাস্থান পরিষ্কার করে নিয়ে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে দেবেন। পূজাস্থানে লক্ষ্মীর পা-সহ আলপনা আঁকবেন। ঘটের পাশে একটি লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন।
পূজার সময়অন্যমনস্ক হবেন না বা অন্য লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। মনকে লক্ষ্মীতে স্থির রাখবেন। পূজার সময় অন্য কথা বললে বা অন্যমনস্ক হলে মন্ত্রপাঠাদি করে লক্ষ্মীপূজা করাই শ্রেয়। কিন্তু একমনে আন্তরিকভাবে লক্ষ্মীপূজা করলে বিনা মন্ত্রেই পূজা সিদ্ধ হয়। অবশ্য দীক্ষিত হলে গুরুমন্ত্রেও পূজা চলে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন, মন্ত্রপাঠ ও পূজাক্রিয়াদিতেঅভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিনা মন্ত্রে পূজা করবেন না। বিনা মন্ত্রে পূজা শুধু সেই সবে অনভিজ্ঞদের জন্য।
লক্ষ্মীপূজা বৃহস্পতিবার মাত্রেই করা যায়। তার জন্য তিথি নক্ষত্রের বিচার করতে হয় না। তাই যাঁরা প্রবাসী তাদের ভারতীয় বা বাংলাদেশী সময় মিলিয়ে পূজা না করলেও চলবে, যেদেশে যেমন বৃহস্পতিবার পড়বে, সেই দেশে তেমনই করবে।
তাছাড়া শাস্ত্রে আছে, প্রবাসে নিয়মং নাস্তি। তাই প্রবাসী হলে রবিবার বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও লক্ষ্মীপূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পূজার আগে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে নেবেন, মা বৃহস্পতিবার পূজা করতে পারলাম না, আজ পূজা নাও। ভারত বা বাংলাদেশবাসী হলে বৃহস্পতিবারের পূজা বৃহস্পতিবারেই করবেন।

Tuesday, October 16, 2018

শারদীয়া দুর্গাপূজা


দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতের অসম,বিহার, ঝাড়খণ্ড,মণিপুর এবংওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালিরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল" মরসুম নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীরা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক বিরাট দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরের মৃন্ময়ী মন্দির এবং অনেক পরিবারে এই রীতি প্রচলিত আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে মহাসপ্তমী থেকে বিজয়াদশমী পর্যন্ত (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মহাসপ্তমী থেকে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত) চার দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশে বিজয়াদশমীতে সর্বসাধারণের জন্য এক দিন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকে।
পারিবারিক স্তরে দুর্গাপূজা প্রধানত ধনী পরিবারগুলিতেই আয়োজিত হয়। কলকাতা শহরের পুরনো ধনী পরিবারগুলির দুর্গাপূজা "বনেদি বাড়ির পূজা" নামে পরিচিত। পারিবারিক দুর্গাপূজাগুলিতে শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-সমাগম হয়ে থাকে। অন্যদিকে আঞ্চলিক স্তরে এক একটি অঞ্চলের বাসিন্দারা যৌথভাবে যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তা বারোয়ারি পূজা বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সময় সর্বজনীন পূজা শুরু হয়। মুলত দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখেই দেশমাতা বা ভারতমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারনা বিপ্লবের আকার নেয়। দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন যা ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিল্পবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা বিভিন্ন সর্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এখন সর্বজনীন পূজায় "থিম" বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। থিমগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে "শারদ সম্মান" নামে বিশেষ পুরস্কারও দেওয়া হয়। এছাড়া বেলুড় মঠ সহ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন শাখাকেন্দ্র এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের বিভিন্ন কেন্দ্রের সন্ন্যাসীরা দুর্গাপূজার আয়োজন করেন



 
Design by দেবীমা | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes