Pages

Wednesday, October 31, 2018

শ্যামা কালী মায়ের পুজা ও দীপাবলী উৎসব



হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসবটি কালী পূজা নামেও পরিচিত। একইসঙ্গে উদ্যাপিত হয় দীপাবলী উৎসব। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের মাধ্যমে ভক্তের জীবনে কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী শ্যামা বা কালীর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে শ্যামা দেবী শান্তি, সংহতি ও সংগ্রামের প্রতীক। হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যের মধ্য দিয়ে শ্যামা পূজা উদযাপন করে। মন্ডপে মন্ডপে শ্যামা দেবীর পূজা আয়োজিত হয়।, শ্যামা মায়ের পূজা, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানা আয়োজন হয় এ পূজায়। একইসঙ্গে সন্ধ্যায় মন্দির, মন্ডপ ও ঘরে-ঘরে দীপাবলী উদযাপনের জন্য প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয়।
অমাবস্যা রজনীর সমস্ত অন্ধকার দূর করে পৃথিবীকে আলোকিত করার অভিপ্রায়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের প্রতিটি ঘরে ঘরে উত্তোলন হয় প্রদীপ। পৃথিবীর সকল অন্ধকারের অমানিশা দূর করতেই এই আয়োজন। অশুভ শক্তির হাত থেকে প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে রক্ষা করতেই এই আলোকিত করা। অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করার প্রয়াস মানুষ সেই আদিকাল থেকেই করে আসছে। এর মাধ্যমে অর্থাৎ জ্ঞানের অবস্থান এবং স্বর্গীয় পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কালী মাতার কাছে স্বামী-স্ত্রী সন্তান স্বজনের কল্যাণ এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করে থাকে। দীপাবলীকে দেওয়ালি ছাড়াও দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। মহালয়ায় শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্তে আগমন করেন বলে, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে এদিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোতবাতি জ্বালায়, কেউ বা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায়।রামায়ন অনুসারে দীপাবলী দিনে ত্রেতা যুগে শ্রী রাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রী রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্যজুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশীতে শব্দবাজি করে। দীপাবলী মূলত পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। দীপাবলীর আগের দিনের চতুর্দশীকে বলা হয় ‘নরকা চতুর্দশী, এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর স্ত্রী সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। চতুর্দশী পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলী উৎসবের দ্বিতীয় দিন, কিন্তু এই দিনই মূল হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিন রাতে শক্তি দেবী কালীর পূজা করা হয়। বিষ্ণুপুরান মতে, বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে পাতালে পাঠান, দীপাবলী দিনে পৃথিবীতে এসে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুদ অযুদ প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। দীপাবলীর তৃতীয় দিন-কাল কার্তিকা শুদ্ধ। এই দিন অসুর বলি নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করে। চতুর্থ দিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া। একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়। এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্ত্রণ করে, কপালে ফোটা দেয়, হাতে রাখী বেঁধে দেয়।
দীপাবলীর রাতে অনুষ্ঠিত হয় শ্যামা কালী পূজা। হিন্দু পুরাণ মতে কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালী পূজার মাহাত্ম্য। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।


0 comments:

Post a Comment

 
Design by দেবীমা | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes