তারা হিন্দু দেবী কালীর একটি বিশিষ্ট রূপ। ইনি দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা। কালীর মতোই তারা ভীষণা দেবী। তারার বিভিন্ন রূপান্তর উগ্রতারা, নীল সরস্বতী, কুরুকুল্লা তারা, খদির বাহিনী তারা, মহাশ্রী তারা, বশ্যতারা, সিতাতারা, ষড়ভূজ সিতাতারা, মহামায়া বিজয়বাহিনী তারা ইত্যাদি। বৌদ্ধধর্মেও তারাদেবীর পূজা প্রচলিত। তারার মূর্তিকল্পনা কালী অপেক্ষাও প্রাচীনতর। কোনো কোনো মতে তারা দুর্গা বা চণ্ডীর রূপান্তর। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার তারাপীঠে অবস্থিত দেবী তারার মন্দির বিখ্যাত।
মূর্তিতত্ত্ব
হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য তার হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ বইয়ে বলেছেন, তন্ত্রসারে দেবী তারার যে রূপ বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপ:
তারা প্রত্যালীঢ়পদা অর্থাৎ শববক্ষে দক্ষিণপদ স্থাপিতা। ভয়ংকরী, মুণ্ডমালাভূষিতা, খর্বা, লম্বোদরী, ভীষণা, কটিতে ব্যাঘ্রচর্মাবৃতা, নবযৌবনা, পঞ্চমুদ্রা শোভিতা, চতুর্ভূজা, লোলজিহ্বা, মহাভীমা, বরদা, খড়্গ কাতরি দক্ষিণহস্তে ধৃতা, বামহস্তদ্বয়ে কপাল ও নীলপদ্ম, পিঙ্গলবর্ণ একজটাধারিণী, ললাটে অক্ষোভ্য প্রভাতসূর্যের মতো গোলাকার তিন নয়নশোভা, প্রজ্জ্বলিত চিতামধ্যে অবস্থিতা, ভীষণদন্তা, করালবদনা, নিজের আবেশে হাস্যমুখী, বিশ্বব্যাপ্ত জলের মধ্যে শ্বেতপদ্মের উপর অবস্থিতা।
তন্ত্রসারে তারার আরও একটি ধ্যানমন্ত্র বর্ণিত হয়েছে: "শ্যামবর্ণা ত্রিনয়না দ্বিভূজা, বরমুদ্রা ও পদ্মধারিণী, চতুর্দিকে বহুবর্ণা ও বহুরূপা শক্তির দ্বারা বেষ্টিতা, হাস্যমুখী মুক্তাভূষিতা, রত্নপাদুকায় পাদদ্বয় স্থাপনকারিণী তারাকে ধ্যান করবে।বৃহদ্ধর্ম পুরাণে তারাকে কেবল শ্যামবর্ণা ও কালরূপিণী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তন্ত্রসারে তারাকেই মহানীল সরস্বতী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতচন্দ্র রায় তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে তারার যে রূপবর্ণনা করেছেন, তা নিম্নরূপ:
তারা রূপ ধরি সতী হইলা সম্মুখ।।
নীলবরণা লোলজিহ্বা করালবদনা। সর্পবান্ধা ঊর্দ্ধ এক জটাবিভূষণা।।
অর্দ্ধচন্দ্র পাঁচখানি শোভিত কপাল। ত্রিনয়ন লম্বোদর পরা বাঘছাল।।
নীল পদ্ম খড়্গ কাতি সমুণ্ড খর্পর। চারি হাতে শোভে আরোহণ শিবোপর।।
0 comments:
Post a Comment